1862 থেকে 1908 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজমাতা Tzu Hsi কিরূপ ভূমিকা পালন করেন?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Habiba
উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে চীনের রাজনীতিতে দারুণ সঙ্কট দেখা দেয় এবং এই সঙ্কটময় সময়ে রাজমাতা জুসি (Tzu Hsi) -র কার্যকলাপের সঙ্গে দেশের রাজনীতি খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল রাজমাতা জুসি মাঞ্চু রাজদরবারের ক্ষমতার কেন্দ্রস্বরূপ ছিলেন। সম্রাট ফেং -এর রাজত্বকাল থেকেই তিনি কার্যত ক্ষমতাসীন ছিলেন। সম্রাট ফেং -এর মৃত্যুর পর তিনি নাবালক তুংচি সম্রাটের অভিভাবিকা হিসাবে (১৮৬২-১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ) স্বয়ং রাজকার্য পরিচালনা করতে শুরু করেন। তুংচি সম্রাটের মৃত্যুর পর তিনি পরবর্তী নাবালক সম্রাট কোয়াং-সুর অভিভাবিকা নিযুক্ত হন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কোয়াংসু সাবালকত্ব প্রাপ্ত হলেও জুসি রাজকার্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। রাজমাতা জুসি একদিকে যেমন ছিলেন ক্ষমতাপ্রিয় অপরদিকে তেমনই ছিলেন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সঙ্কীর্ণচেতা এবং উগ্ৰসংস্কারের বিরােধী। সম্রাট কোয়াংসু চীনের রাজনৈতিক ও সামরিক দুর্বলতা দূর করে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের উপযুক্ত পটভূমি তৈরি করার জন্য ‘শতদিবসের সংস্কার’ প্রবর্তন করেন। কিন্তু রাজমাতা জুসি -র বিরােধিতার জন্য এই সংস্কারসমূহকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু চীনদেশের জনসাধারণ পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে এবং রাজমাতা জুসির সংস্কারবিরােধী এই নীতি মাঞ্চু রাজপরিবারকে চীন জনসাধারণের কাছে আরও অপ্রিয় করে তােলে।
১৯০৪-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের রুশ জাপান যুদ্ধে জাপানের কাছে রাশিয়ার পরাজয় চীন জাতির চিন্তাধারার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। জাপানের অনুকরণে চীন জাতিও পাশ্চাত্য সভ্যতায় দীক্ষা গ্রহণ করে আত্মশক্তি বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। চীনের জনসাধারণের ধারণা হয় যে পাশ্চাত্যের রীতি নীতি অনুসরণ করে আধুনিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির অনুশীলনের মাধ্যমে চীন দেশও শক্তিশালী হয়ে উঠে পূর্ব মর্যাদা পুনরায় লাভ করতে সমর্থ হবে। ইতিমধ্যে সান ইয়াৎ সেন -এর মতাে বিপ্লবীদের প্রচারকার্য ও তৎপরতার ফলে চীনের সাধারণ মানুষ জাতীয়তাবাদ, প্রজাতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়। রাজমাতা জুসির পক্ষেও এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করা সম্ভব ছিল না। সুতরাং তিনি জনপ্রিয়তা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষা সংক্রান্ত এবং শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত কিছু কিছু সংস্কার সাধনের জন্য অগ্রসর হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে উপযুক্ত প্রস্তুতির পর একটি সংবিধান মঞ্জুর করা হবে। কিন্তু এই বিষয়ে সামগ্রিক প্রস্তুতি গ্রহণের পূর্বেই ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই নভেম্বর রাজমাতা জুসির মৃত্যু হয়। সংস্কারবিরােধী এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার প্রতি অবিশ্বাসী হলেও রাজমাতা জুসি কূটকৌশলী শাসক ছিলেন। তার মৃত্যুর পর মাঞ্চু রাজপরিবার আরও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের পতনের পথ আরও প্রশস্ত হয়।