মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ কি?
Share
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Sahamina
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও তার কূটকৌশলী মন্ত্রী কৌটিল্য প্রতিষ্ঠিত বিশাল মৌর্য সাম্রাজ্যে অশােকের মৃত্যুর (২৩২ খ্রিঃ পূঃ) পর দ্রুত পতনের দিকে অগ্রসর হয়। অশােকের মৃত্যুর মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ১৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে (মতান্তরে ১৮৫ খ্রিঃ পূঃ) শেষ মৌর্য সম্রাট বৃহদথ তার ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ কর্তৃক নিহত হলে মৌর্য বংশ লুপ্ত হয় এবং মগধের ইতিহাসে শুঙ্গ বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ নিয়ে পণ্ডিতরা নানা মতবাদের অবতারণা করেছেন।
(১) ব্রাহ্মণ্য প্রতিক্রিয়া : মহামহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেন যে, মৌর্য শাসনের প্রতি ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের বিদ্বেষের ফলে মৌর্য কর্তৃত্বের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। মগধে দুর্বল মৌর্য কর্তৃত্বের উপর আঘাত হানেন ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ, অন্ধ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণ সাতবাহনদের আধিপত্য এবং ব্রাহ্মণ চেতবংশ কলিঙ্গ দখল করে। ডঃ শাস্ত্রী তার বক্তব্যের সমর্থনে বেশ কয়েকটি যুক্তির অবতারণা করেছেন।
(ক) অশােক ছিলেন একজন শূদ্র রাজা তিনি পশুবলি বন্ধ করে দিলে ব্রাহ্মণদের যাগযজ্ঞ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
(খ) অশােক একটি শিলালিপিতে ব্রাহ্মণদের সম্পর্কে দর্পভরে বলেন যে, “এতদিন যাদের ভূদেব (পৃথিবীর দেবতা) বলে মনে করা হত, তিনি তাদের মিথ্যা বা ভণ্ড দেবতা বলে প্রতিপন্ন করেছেন।” এই উক্তি ব্রাহ্মণদের ক্ষুব্ধ করে।
(গ) তিনি ধর্মমহামাত্র নামক রাজকর্মচারী নিয়ােগ করে ব্রাহ্মণদের কর্তৃত্বে আঘাত হানে।
(ঘ) এতদিন পর্যন্ত ব্রাহ্মণরা শাস্তির ক্ষেত্রে ও আদালতে কিছু বিশেষ সুবিধা ভােগ করত। অশোক দণ্ডসমতা ও ব্যবহার-সমতা’র নীতি প্রবর্তন করে ব্রাহ্মণদের বিশেষ অধিকার খর্ব করেন। ডঃ শাস্ত্রী বলেন যে, অশােকের মৃত্যুর পর তার দুর্বল উত্তরাধিকারীদের আমলে ব্রাহ্মণরা বিদ্রোহ ঘােষণা করে।
ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মহামহােপাধ্যায় শাস্ত্রীর যুক্তিগুলি মানতে রাজি নন।
(ক) অশােক শূদ্রবংশজাত ছিলেন না। তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশের সন্তান। অশােকের বহু পূর্বে উপনিষদ ও শ্রুতিশাস্ত্রে পশুবলি নিষিদ্ধ হয়েছিল। সুতরাং পশুবলি নিষিদ্ধ করে অশােক কোনও শাস্ত্রবিরােধী কাজ করেন নি।
(খ) অশােকের শিলালিপিতে ব্রাহ্মণদের সম্পর্কে ব্যবহৃত ‘ভণ্ড দেবতা’ কথাটি সঠিক নয়। ডঃ সিলভা লেভি উক্ত শিলালিপিটির ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিয়েছেন যা অধিকাংশ পণ্ডিতই গ্রহণ করেছেন।
(গ) ধম্মমহামাত্র -দের নিয়ােগ করে অশােক ব্রাহ্মণদের অধিকার ও কর্তৃত্বের উপর কোনও আঘাত হানেন নি। তাদের অন্যতম কর্তব্য ছিল ব্রাহ্মণ-সহ সকল প্রজার মঙ্গলসাধন। ব্রাহ্মণরাও এই পদে নিযুক্ত হতে পারত।
(ঘ) দণ্ডসমতা ও ব্যবহার-সমতা দ্বারা ব্রাহ্মণদের বিশেষ অধিকার খর্ব করা হয় নি বা ব্রাহ্মণদের সকল বর্ণের মানুষের সঙ্গে এক করে দেওয়া হয় নি। এর দ্বারা সারা দেশে ব্রাহ্মণদের জন্য একই ধরনের দণ্ড এবং বিচারালয়ে একই ধরনের আইন প্রবর্তিত হয়। এছাড়া বলা দরকার যে, এ সময় ব্রাহ্মণরা কোনও বিশেষ অধিকার ভােগ করত না। মহাভারত, অর্থশাস্ত্র প্রভৃতি গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, রাজদ্রোহে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণদের জলে ডুবিয়ে মারা হত।
(ঙ) ডঃ শাস্ত্রী -র মতে অশােকের উত্তরাধিকারীদের সাথে ব্রাহ্মণদের তীব্র বিরােধ শুরু হয় — এ বক্তব্যও সঠিক নয়। কলহন -এর ‘রাজতরঙ্গিনী’ থেকে জানা যায় যে, কাশ্মীরের মৌর্য-রাজ জলৌকার সঙ্গে ব্রাহ্মণদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
(চ) বিভিন্ন উপাদান থেকে জানা যায় যে, ১৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পুষ্যমিত্রের বিদ্রোহের বহু পূর্বেই মৌর্য সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কাশ্মীর, গান্ধার, বিদর্ভ এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন অংশ অনেক আগেই স্বাধীন হয়ে যায়। বৃহদথের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তাকে অপসারণের জন্য কোনও বিদ্রোহের দরকার ছিল না। পুষ্যমিত্র কর্তৃক বৃহদথের অপসারণ কোনও বিদ্রোহ নয় — এটি ছিল প্রাসাদ বিপ্লব। ডঃ রাধাকুমুদ মুখােপাধ্যায় বলেন যে, একদল বিক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণদের নেতা হিসেবে নয় — সেনাবাহিনীর উপর কর্তৃত্বের জন্যই পুষ্যমিত্র শুঙ্গর উদ্দেশ্য সফল হয়।
(২) অশােকের অহিংস নীতি : ডঃ দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকর, ডঃ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী প্রমুখ ঐতিহাসিকরা অশােকের অহিংস নীতিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী করেছেন। বলা হয় যে, অশােক অহিংস নীতি গ্রহণ করে ‘বিহারযাত্রা’কে ‘ধম্মযাত্রা’য় পরিণত করেন এবং ‘ ‘ভেরীঘােষ’ ‘ধম্মঘােষ’এ পরিণত হয়। তিনি সরকারি প্রশাসকদের ‘ধম্ম’ প্রচারকে রূপান্তরিত করেন। দীর্ঘ ঊনত্রিশ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকার ফলে তার সেনাবাহিনী ক্ষয়শক্তি হারিয়ে ফেলে, সাম্রাজ্যের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, সরকারি আমলারা অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, দূরবর্তী প্রদেশসমূহে সরকারি নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে যায়, জনগণের উপর অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং জনগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ডঃ রায়চৌধুরী বলেন যে, ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে যখন গ্রিক আক্রমণের সম্ভাবনা ঘনীভূত হচ্ছিল, তখন ভারতের প্রয়ােজন ছিল সামরিক শক্তির নীতিতে বিশ্বাসী পুরু বা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতাে একজন শাসক, কিন্তু এ সময় ভারত পেল একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ভাববাদীকে। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর একটি আধ্যাত্মিক বিপ্লব সম্পন্ন করার কাজে মগধ তার সামরিক শক্তির অপচয় সাধন করে।
ডঃ নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী এবং ডঃ রােমিলা থাপার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে অহিংস নীতি গ্রহণ করলেও অশােক প্রশাসন বা প্রতিরক্ষায় বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখান নি। দিগ্বিজয়ের নীতি পরিহার করলেও তিনি পরিপূর্ণ যুদ্ধবর্জনের নীতি গ্রহণ করেন নি, সেনাদল ভেঙে দেন নি বা সাম্রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড রহিত করেন নি বরং পার্শ্ববর্তী উপজাতিদের দমন করার জন্য একাধিক অভিযান পাঠিয়েছেন। অশােক ছিলেন বাস্তববাদী শাসক। সাম্রাজ্যের সংহতি বজায় রাখার জন্য তিনি অহিংস নীতিকে ব্যবহার করেছিলেন। ডঃ শাস্ত্রী বলেন যে, কেবলমাত্র যুদ্ধ করলেই একটি সাম্রাজ্য শক্তিশালী হয় না। সারা জীবন যুদ্ধ করেও মােগল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তার সাম্রাজ্যকে রক্ষা করতে পারেন নি।
(৩) প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের অত্যাচার : মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য বিভিন্ন প্রদেশে অমাত্যদের অত্যাচারকে বহুলাংশে দায়ী করা হয়। ডঃ হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী বলেন যে, দূরবর্তী প্রদেশগুলিতে অমাত্যদের অত্যাচার এবং এর ফলে প্রদেশগুলিতে প্রজাবর্গের বিদ্রোহ বিন্দুসারের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল। বিন্দুসারের আমলে তক্ষশিলায় প্রজাবিদ্রোহ ঘটে। অশােকের আমলেও তক্ষশিলাতে বিদ্রোহ ঘটে এবং বিদ্রোহ দমনের জন্য যুবরাজ কুণালকে পাঠানাে হয়। বিদ্রোহী প্রজারা কুণালের কাছে দুষ্ট অমাত্যদের বিরুদ্ধে অভিযােগ জানায়। দিব্যবদান নামক গ্রন্থে বর্ণিত এই কাহিনির সমর্থন মেলে অশােকের কলিঙ্গ লিপিতে। এই লিপিতে তিনি ধম্মমহামাত্রদের নির্দেশ দেন যাতে জনসাধারণের উপর কোনও অত্যাচার না হয় সেদিকে তারা যেন লক্ষ রাখেন। ডঃ থাপার বলেন যে, এই লিপি একমাত্র সদ্য মৌর্য শাসনাধীনে আসা নববিজিত কলিঙ্গতেই মিলেছে — অন্যত্র নয়। সুতরাং তার মতে প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা অমাত্যদের অত্যাচারের কাহিনি সঠিক নয়।
(৪) অর্থনৈতিক অবক্ষয় : ডঃ দামােদর ধর্মানন্দ কোশান্ধী এবং ডঃ রােমিলা থাপার মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য অর্থনৈতিক কারণের উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। বলা হয় যে বিশাল সেনাবাহিনীর ভরণ-পােষণ, বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর বেতন দান, নতুন নতুন অঞ্চলে বসতি বিস্তার, বৌদ্ধধর্ম প্রচার, বৌদ্ধ মঠ নির্মাণ এবং অশােকের জনহিতকর কার্যাবলীর ফলে মৌর্য অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। এই অবস্থার মােকাবিলা করার জন্য অভিনেতা ও গণিকাদের উপর কর আরােপ করা হয় এবং মুদ্রায় খাদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। গাঙ্গেয় উপত্যকায় কৃষি সম্প্রসারণ ঘটলেও সাম্রাজ্যের সর্বত্র তা ছিল না এবং বিশাল সাম্রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাবার সাধ্য নির্দিষ্ট এলাকার বর্ধিষ্ণু কৃষি অর্থনীতির পক্ষে সম্ভব ছিল না।
(৫) গণ-বিদ্রোহ : ডঃ নীহাররঞ্জন রায় এবং অপরাপর কয়েকজন ঐতিহাসিক পুষ্যমিত্র শুঙ্গের বিদ্রোহকে গণ-বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে মৌর্য শাসকদের অত্যাচার, উচ্চ করভার এবং বিদেশি ভাবধারা গ্রহণ প্রভৃতির বিরুদ্ধে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এছাড়া তাদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দেয় পশুহত্যা ও সমাজ বন্ধের মতাে ঘটনা। এই গণ-বিদ্রোহ তত্ত্বের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছে। বলা হয় যে, এই যুগে গণ-বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না, কারণ গণ-বিদ্রোহের পূর্বশর্ত হিসেবে জাতীয় চেতনার কোনও উন্মেষ এ সময় হয় নি। মেগাস্থিনিসের বিবরণের উপর ভিত্তি করে ভূমিরাজস্ব হিসেবে উৎপন্ন ফসলের এক-চতুর্থাংশের কথা বলা হয়েছে। ভূমিরাজস্বের এই উচ্চহার কেবলমাত্র পাটলিপুত্ৰ সন্নিহিত উর্বর অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল — সাম্রাজ্যের সর্বত্র নয়। অর্থশাস্ত্রও কেবলমাত্র উর্বর অঞ্চলের জন্যই এক-চতুর্থাংশ রাজস্বের হার ধার্য করেছে। সুতরাং গণ-বিদ্রোহ তত্ত্ব মানা যায় না।
(৬) অন্যান্য কারণ : উপরিউক্ত কারণগুলি নয় — সাম্রাজ্যের পতনের জন্য ঐতিহাসিকরা ভিন্নতর কিছু কারণের উল্লেখ করেছেন।
(ক) চরম কেন্দ্রীভূত মৌর্য শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়ােজন ছিল একজন শক্তিশালী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শাসক। অশােক পরবর্তী সম্রাটরা কেউই যথেষ্ট দক্ষ না হওয়ায় শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
(খ) মৌর্য আমলাতন্ত্র যথেষ্ট সুসংগঠিত ছিল না। আমলাদের আনুগত্য ছিল রাজার প্রতি রাষ্ট্রের প্রতি নয়। রাজা বদলের সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীদেরও বদল ঘটত। ফলে রাষ্ট্র আমলাদের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হত।
(গ) রাজকর্মচারী নিয়ােগের ক্ষেত্রে এই যুগে চিনের মতাে কোনও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা পদ্ধতি গড়ে ওঠে নি। শাসকগােষ্ঠী নিজেদের পছন্দমতাে কর্মচারী নিয়ােগ করতেন। এর ফলে একটি বিশেষ সামাজিক শ্রেণির মধ্যেই রাজকর্মচারী নিয়ােগ ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে থাকত। এছাড়া, স্থানীয়ভাবে কর্মচারী নিযুক্ত হওয়ায় স্থানীয় দলাদলি স্থানীয় প্রশাসনে প্রভাব ফেলত।
(ঘ) জনমত গঠন করা, প্রকাশ করা বা জনমতকে স্থায়িত্ব দান করার জন্য এই যুগে কোনও প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে নি। এর ফলে শাসক ও প্রজাদের মধ্যে ব্যবধান বাড়তে থাকে। মহামাত্র ও গুপ্তচরের মাধ্যমে জনমত জানা যেত, কিন্তু ব্যাপক গুপ্তচরব্যবস্থা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিল।
(ঙ) এই যুগে রাজা ও রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণাও ছিল ভিন্ন। রাষ্ট্র যে সরকারের চেয়েও বড়াে এ ধারণা তখনও আসে নি। ডঃ থাপার বলেন যে, গণরাজ্যগুলি ধ্বংসের পর ধীরে ধীরে রাষ্ট্রচেতনাও অপসৃত হয়। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য নয় — সমাজবন্ধন বা ধর্মের প্রতি অর্থাৎ জাতিভেদের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।
(চ) এইসব নানা কারণে সাম্রাজ্য যখন দুর্বল হয়ে পড়েছে, তখন মৌর্য রাজসভাও গােষ্ঠীদ্বন্দ্বে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ও তার বিরােধী গােষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
(ছ) ঠিক এই সময়েই শুরু হল গ্রিক আক্রমণ। জাতীয় চেতনার অভাবে ভারতবাসীর পক্ষে এই আক্রমণ প্রতিরােধ করা সম্ভব হল না। অযােধ্যা, পাঞ্চাল, মথুরা ধারে ধীরে গ্রিকদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। দুর্বল মৌর্য কর্তৃপক্ষ কোনওভাবেই তাদের প্রতিরােধ করতে পারল না।
(জ) ঠিক এই অবস্থায় ১৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রকাশ্য দিবালােকে সেনাবাহিনীর সামনে সেনা প্রধান পুষ্যমিত্র শুঙ্গ রাজা বৃহদথকে হত্যা করে মগধে শুঙ্গবংশ প্রতিষ্ঠা করলেন।