মেইজি পুনরুদ্ধার জাপানের সংস্কৃতির ওপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
মেইজি যুগের সকল নেতাই পাশ্চাত্যের অনুকরণে জাপানের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তােলার পক্ষপাতী ছিলেন। তবে শুধুমাত্র বহিরঙ্গের পরিবর্তন করেই জাপানের নেতৃবর্গ সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দ্রুত পরিবর্তন সাধনের জন্য তারা পাশ্চাত্যের সাহায্যপ্রার্থী হন। শিক্ষালাভের জন্য দলে দলে ছাত্র ইউরােপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত হতে শুরু করে। পাশ্চাত্য ভাষার মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতির শিক্ষাদানের জন্য জাপানে অসংখ্য বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি বিকাশেরও সুযােগ ঘটে। পাশ্চাত্য পণ্যদ্রব্যের বহুল প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতিও জাপানিদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। বক্তৃতা, আলােচনা সভা এবং পত্রিকা আকর্ষণের মাধ্যমে পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণা জনপ্রিয় করে তােলার জন্য ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে যেইরােকুস নামে একটি সমিতি গঠিত হয়। এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মেরি আরােগরি এবং নিশিমুরা শিকু। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই সমিতির পক্ষ থেকে মেইরােকু আবসি নামে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। জাপানী বুদ্ধিজীবীরা এই সময় পশ্চিমী ভাবধারা প্রকাশের জন্য জাপানী পরিভাষার অভাব বােধ করেন। মেইরােকুশ এই অভাব দূরীকরণের জন্য অগ্রসর হন। জাপানী পরিভাষা উদ্ভাবনে ফুকুজাওয়া ইউকিচি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। তাছাড়া মােরি, ওগাই, যােকাই, সােনান, মােরি আয়ােনােরি, ফুকুজাওয়া ইউকিচি প্রমুখের নাম জাপানের ভাষাভিত্তিক জাগরণের পৃষ্ঠপােষক হিসাবে বিশেষভাবে পরিচিত। সুলেখক হিসাবে মােরি, ওগাই, যােকাই, সােনান, মােরি আয়ােনােরি খুব সুনাম অর্জন করেন। কিন্তু সােনানের চিন্তাধারা রাজতন্ত্র বিরােধী এরূপ ধারণার বশীকৃত হলে গুপ্তঘাতকের হস্তে তিনি নিহত হন। মোরি আয়ােনােরি মিল ও স্পেন্সর এর চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রচার করেন যে ধমীয় স্বাধীনতা এবং শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে মানব কল্যাণসাধন করা সম্ভব। তিনি অধিকারের প্রশ্নে পুরুষ ও নারীর বৈষম্য দূর কারও পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু তার এই চিন্তাধারা জাপানের শিন্টো ধর্মের ওপর আঘাত করতে পারে এই আশঙ্কায় একজন ধর্মোন্মাদ ব্যক্তি তাকে হত্যা করেন। মেইজি যুগের সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য নাম ফুকুজাওয়া ইউকিচি। তিনি পাশ্চাত্য জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। ইতিহাস বলতে তিনি মানব সভ্যতার ইতিহাস বুঝতেন এবং সামন্ততন্ত্রকে মানব সভ্যতা বিস্তারের পথে বাধা স্বরূপ বলে বিবেচনা করতেন।
মেইজি যুগের জাপানের সংস্কৃতির আর দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সাহিত্য ও শিল্পচর্চা। সাহিত্যের ক্ষেত্রে ফুকুজাওয়া ইউকিচি, ডনােগাকি বােরুন, য়ানােরুকাই ওজোকি প্রমুখ লেখকজন — জাপানে একটি নতুন যুগের সূচনা করেন। প্রাক মেইজি যুগে জাপানে শিল্পের ক্ষেত্রে উন্নতির যে সূচনা হয়, মেইজি যুগে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। মেইজি যুগের শিল্পীদের মধ্যে কোনাে হােগাই এবং হাসিমতাে গহাের নাম বিশেষভাগে উল্লেখযােগ্য। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে টোকিও আর্ট স্কুল স্থাপিত হওয়ার ফলে শিল্পকলার ক্রমােন্নতির পথ আরও সুগম হয়। জাপানের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে ধর্মীয় আন্দোলনও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই সময় খ্রিস্টধর্ম পুনরুজ্জীবিত হয়, কনফুসীয় ধর্ম স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং বৌদ্ধধর্মের নানারূপ সংস্কার শুরু হয়। পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতিও জাপানীদের আগ্রহ উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পায়। যুক্তিবাদী চিন্তাধারা এবং পাশ্চাত্য দর্শনের প্রতি আগ্রহ আধ্যাত্মিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে জাপানের শিক্ষিত সম্প্রদায় মধ্যে একটি বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন সাধন করে।