মেইজি জাপানের অর্থনৈতিক উন্নতিতে কৃষক শ্রেণীর কোন কৃতিত্ব তুমি খুঁজে পাও?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Sahamina
টোকুগাওয়া শোগুনেটদের পতন ও মেইজি যুগের আবির্ভাবের ফলে জাপানে আধুনিক রাষ্ট্ৰোপযােগী অর্থনৈতিক ভিত্তি স্থাপিত হয়। মেইজি সরকার দেশের অর্থনৈতিক আধুনিকী করণের কর্মসূচী নিয়ে শিল্পভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামাে গড়ে তােলার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সেই পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে সক্রিয়। মেইজি সরকারের এই নীতিকে সাহায্য মণ্ডিত করে তােলার জন্য জাপানের সকল শ্রেণীর মানুষ সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। এমনকি কৃষকশ্রেণীও মেইজি যুগের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে খুবই কৃতিত্বের পরিচয় দেয়। প্রাক্ মেইজি যুগে কৃষিজাত উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য বিদেশে প্রেরণ করার প্রয়ােজন দেখা দেয়। ঊনবিংশ শতকের গােড়ার দিকেই কৃষিজাত দ্রব্যাদি বহির্বাণিজ্যে রপ্তানি সুলভ দ্রব্য হিসাবে গণ্য হয়। অর্থাৎ বাণিজ্যিক কৃষিব্যবস্থা চালু হয়। বহির্বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার জন্য জাপানের কৃষকশ্রেণী কৃষিজাত দ্রব্যাদির উৎপাদন ও বিক্রয়ের ব্যাপারে ব্যবসায়ী সুলভ দক্ষতা অর্জন করে। সুতরাং মেইজি যুগের শিল্প সংগঠনের ব্যাপারে কৃষক শ্রেণীর অনেকে উদ্যোক্তা (Enterprenur) -এর ভূমিকা গ্রহণ করতে থাকে। তবে শিল্পের ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে কৃষকদের কয়েকটি অসুবিধা ছিল। প্রথমত, অধিকাংশ কৃষক গ্রামাঞ্চলে বসবাস করত। কিন্তু জাপানের শিল্প মূলত ছিল শহরাশ্রয়ী। সুতরাং নিজের পরিচিত পরিবেশের বাইরে গিয়ে শিল্পপত্তনের জন্য তাদের চেষ্টা করতে হত। দ্বিতীয়ত, জাইবাৎসু গােষ্ঠীর বণিকগণ প্রকৃতপক্ষে ছিল সামন্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তাদের সঙ্গে কৃষকদের সম্পর্ক কোন কালেই মধুর ছিল না। সেজন্য সামুরাই শ্রেণীকে শিল্পপত্তনের ব্যাপারে বণিক শ্রেণী আগ্রহ প্রকাশ করলেও কৃষকদের প্রতি তাদের কোন সহানুভূতি ছিল না। তৃতীয়ত, কৃষকদের সঞ্চিত মূলধনের পরিমাণ যা ছিল তা দিয়ে বৃহৎ কোন শিল্পোদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। এইসব কারণে জাপানের কৃষকগণ শিল্প সংগঠক হিসাবে অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বেশ কয়েকটি বাধার সম্মুখীন হয়।
কিন্তু আত্মবিশ্বাসী এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত কৃষকগণ এই সব বাধা অতিক্রম করে অল্পদিনের মধ্যেই জাপানের শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির অন্যতম বিশ্বস্ত প্রতিনিধিতে পরিণত হয়। বিশেষত মেইজি যুগের অর্থনীতিবিদগণ কৃষিকার্যকে অবহেলা করতে শুরু করলে কৃষকগণ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব নিজেদের হাতেই গ্রহণ করে। এই ব্যাপারে শিবু সাউই, ইয়িচি, যাসুদা, জেন জিও প্রমুখ উদ্যোক্তাগণ খুবই দক্ষতার পরিচয় দেয়। কার্পাস ও রেশম শিল্প ছাড়াও মৃৎপাত্র, কাচ ও চীনামাটির বাসনপত্র তৈরির কারখানা স্থাপন করে কৃষকশ্রেণী শিল্প সংগঠকগণ জাপানের প্রাচীন শিল্পকথার পুনর্জাগরণের সহায়ক হয়ে ওঠে। ভারী শিল্পের পাশাপাশি এই সব ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলাে জাপানের অর্থনীতির উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে তােলে। এই শিল্প সংগঠকদের সৃজনশীল প্রতিভাকে মেইজি সরকার বিশেষভাবে উৎসাহিত করে। ফলে কৃষকশ্রেণীর মধ্য থেকে একটি নতুন বণিক শ্রেণীর উদ্ভব ঘটে যারা জাপানের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে।