বিংশ শতাব্দীর চীনের সাহিত্যে কিরূপ পরিবর্তন দেখা যায়?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের পর চীনের সাহিত্যের ক্ষেত্রেও এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পিকিং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রাপ্ত পণ্ডিত ভক্টর হু সুশি ছিলেন এই আন্দোলনের উদ্যোক্তা। New Tide নামক বিখ্যাত পত্রিকার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন এবং তার অন্যতম সহযােগী ছিলেন চেন তু-সিও। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কথ্যভাষায় সাহিত্য রচনার সিদ্ধান্তের কথা হু সুশি প্রকাশ্যে ঘােষণা করেন এবং প্রাচীনপন্থী সাহিত্যের ভাষা বর্জন করার জন্য তিনি সকলের নিকট আবেদন জানান। কারণ প্রাচীনপন্থী সাহিত্যের ভাষা কথ্যভাষা হিসাবে বহুপূর্বেই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। সরকারের উচ্চপদে নিযুক্ত হওয়ার জন্যই ছাত্রগণ বাধ্য হয়ে অপ্রচলিত ভাষা শিক্ষা করে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হত। অপ্রচলিত ভাষা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারী পদ, সম্মান ও পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিলাভ করা। কিন্তু প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন এবং মাঞ্চু সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন যুগের ভাষা শিক্ষারও প্রয়ােজন শেষ হয়ে যায়। অপরদিকে এই সময় চীনের চিন্তাজগতের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন যুগের শৃঙ্খলে আবদ্ধ চিরাচরিত জড়তার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছাও প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রাচীন ভাষা ত্যাগ করে চলিত ভাষায় সাহিত্য, পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ প্রভৃতি রচনা করার প্রচেষ্টা জাতীয় জীবনের জড়তা দূর করার একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসাবে পরিগণিত হয়। সাহিত্যের বাহন হিসাবে চলিতভাষা ব্যবহারের পক্ষে ডক্টর হু সুশি আন্দোলন শুরু করলে, প্রথম দিকে তাকে সমালােচনার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু চীনের একদল পণ্ডিতের সক্রিয় সমর্থনের ফলে ডক্টর হু সুশি -র মত শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করতে সমর্থ হয়।
এই সময় চীনে ভাষা সরলীকরণের জন্যও একটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। জনসাধারণের নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রচেষ্টা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন ওয়াই. সি. জেমস ইয়েন। ন্যাশনাল পপুলার এডুকেশন অ্যাসােসিয়েসন এই বিষয়ে মিস্টার ইয়েনকে খুব সাহায্য করে। মিস্টার ইয়েন ও তার সহযােগীরা কঠোর পরিশ্রম করে ১৩০০ লিপি সম্বলিত একটি পাঠ্যসূচী তৈরি করেন। সাধারণত এই সব লিপিই চলিত ভাষায় বেশি ব্যবহৃত হত। এই সব লিপির সঙ্গে পরিচয় হলেই সাধারণ লােকের পক্ষে প্রয়ােজনীয় চিঠি-পত্র লেখা, হিসাব-পত্র রক্ষা করা, সংবাদপত্র পাঠ করা ও বুঝতে পারা সম্ভব। সাড়ে চারমাস হাতে কলমে শিক্ষালাভ করলে এবং প্রত্যহ দেড় ঘণ্টা পড়াশুনা করলেই যে কোন লােকের পক্ষে এই শিক্ষাপদ্ধতির ঈপ্সিত ফল লাভ করা সম্ভব ছিল। দেশ থেকে নিরপেক্ষতা দূর করার জন্য একদল শিক্ষক ও ছাত্র স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে থাকে। অল্পদিনের মধ্যেই এই শিক্ষাপদ্ধতি খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং নিরক্ষর জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষালাভের আগ্রহ দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে প্রথমদিকে এই আন্দোলন শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়ে।