প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জাপানের যোগদানের কারণ কি ছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Sahamina
অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ, সামরিক দিক থেকে আধুনিক ও শক্তিশালী এবং রাজনৈতিক দিক থেকে উচ্চাশী জাপানের পক্ষে পূর্ব এশিয়ায় একক আধিপত্য স্থাপনের জন্য সাম্রাজ্যবাদী মনােভাব পােষণ করা খুবই স্বাভাবিক ছিল। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জাপানের ধারণা হয় যে ইউরােপের শক্তিবর্গ আত্মঘাতী যে সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে তার ফলে তাদের অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তাদের অধীনস্থ অঞ্চলগুলাের ওপর এইসব শক্তি কর্তৃত্ব অনেকাংশে শিথিল হয়ে পড়বে। জাপান সেই সুযােগে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সমর্থ হবে। প্রকৃতপক্ষে প্রথম যুদ্ধের প্রাক্কালে জাপান এশিয়ার মনেরাে নীতি (Asiatic Monroe Doctrine) ঘােষণা করে এবং এশিয়াবাসীদের জন্য এই নতুন স্লোগান তােলে। অর্থাৎ এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলাের ওপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করার এক নতুন রাজনৈতিক কৌশল জাপান গ্রহণ করে। ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলাের হাত থেকে এশিয়ার দেশগুলােকে মুক্ত করার কোন বাসনা জাপানের ছিল না। জাপানের মূল লক্ষ্য ছিল তার জন্য নয়া সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকদের সম্প্রসারণ।
সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপানের পক্ষে নিরপেক্ষ বা নিস্পৃহ থাকা সম্ভব ছিল না। ইঙ্গ জাপান মৈত্রী চুক্তি বলবৎ থাকলেও ব্রিটিশ ওপনিবেশিক মন্ত্রী এডওয়ার্ড গ্রে প্রথম দিকে জাপানের সাহায্যপ্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। কিন্তু যুদ্ধের চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত মিস্টার গ্রীন জাপানের বিদেশমন্ত্রী ক্যাটোর এর সঙ্গে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের গতি বিস্তৃত হলে জাপানী হস্তক্ষেপের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে আলােচনা শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটিশ বাণিজ্য জাহাজের ওপর জার্মানীর ক্রুজারের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ইংল্যান্ডের পক্ষে জাপানের সহযােগিতা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে ইঙ্গ জাপান মৈত্রী চুক্তিতে এমন কোন শর্ত ছিল না যার ফলে ইউরােপীয় কোন যুদ্ধে জাপান ব্রিটিশের সহযােগী শক্তি হিসাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে জাপান ব্রিটেনের সাহায্যকল্পেই যুদ্ধে যােগ দিতে প্রস্তুত হয়। তবে জাপান এই যুদ্ধে যােগ দেওয়ার পূর্বেই নিজের স্বার্থের কথা বিশেষভাবে চিন্তা করেই বিশ্বযুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়ার মতাে বিপজ্জনক কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই যুদ্ধে যােগ দিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারের সম্ভাবনা ছাড়াও আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধির স্বপ্ন জাপান দেখতে শুরু করে। জাপানের বিদেশমন্ত্রী ক্যাটোর মূল লক্ষ্য ছিল এই যুদ্ধে যােগ দিয়ে এশিয়ার মাটি থেকে জাপানের আধিপত্য সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হলে জার্মানী অধিকৃত এইসব অঞ্চলে জাপানের কর্তৃত্ব স্থাপন করা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাপানের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত আক্রোশ থাকলেও মিত্রপক্ষের অন্যতম অংশীদার রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের স্বপ্ন দেখা জাপানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে এই সময় জাপানের একদল রাজনীতিবিদ জার্মানীর পক্ষ অবলম্বন করে এশিয়ায় অবস্থিত রুশ উপনিবেশ সমূহ জয় করে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যাটোর অভিমতই সরকারী মতে পরিণত হয় এবং অক্ষশক্তির পরিবর্তে মিত্রশক্তির সঙ্গে সহযােগিতা করতে জাপান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে অগাস্ট জাপান প্রকাশ্যভাবে মিত্রপক্ষে যােগ দিয়ে জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে। অধ্যাপক ক্লাইভের মতে ইঙ্গ জাপান মৈত্রী চুক্তির প্রতি জাতীয় দায়িত্ব এবং এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য জাপান এই যুদ্ধে যােগ দেয়।