পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রশাসনের কাঠামো কেমন?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
সংবিধানে ভারতকে ‘রাজ্যগুলির সমবায় বা সম্মিলন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভারতের শাসনবিভাগীয় কাঠামাে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির। এই কারণে সংবিধানে সমগ্র ভারতের শাসনবিভাগীয় কাঠামােকে কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও রাজ্য প্রশাসন এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কেন্দ্রের মতাে রাজ্যের শাসনবিভাগীয় কাঠামাের তিনটি ভাগ রয়েছে, যথা- (i) প্রশাসনিক, (ii) আইন-বিষয়ক এবং (iii) সচিবালয়।
(i) প্রশাসনিক : রাজ্যের প্রশাসনিক দপ্তর রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন রাজ্য মন্ত্রীসভাকে নিয়ে গঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যপাল হলেন রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক প্রধান। রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামােয় তিনি সর্বোচ্চ পদাধিকারী। তবে ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতাে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির মতাে রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসন প্রধান। রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক, তাই তাঁর পদটিকে নেহাতই নামসর্বস্ব পদ বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন। রাজ্য প্রশাসনের প্রকৃত প্রশাসনিক প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রীসভা। রাজ্যের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্ৰীকে প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্য প্রশাসন পরিচালিত হয়। সংসদীয় গণতান্ত্ৰিক কাঠামাের রীতি অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভাকে রাজ্য আইনসভার নিম্নকক্ষ বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয়। সংবিধান অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভা রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্ম সম্পাদনের বিষয়ে রাজ্য বিধানসভার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। রাজ্য প্রশাসনের যাবতীয় নীতি ও কর্মসুচির বাস্তব রূপায়ণ এবং রাজ্যের সমগ্র প্রশাসন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রাজ্য মন্ত্রীমণ্ডলী একা পালন করতে পারে না। এজন্য তাদের রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যকের আমলা ও রাজ্য প্রশাসনের বিভাগীয় সরকারি কর্মচারীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাজ্য প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত এই সরকারি কর্মীদের অরাজনৈতিক স্থায়ী প্রশাসক বা প্রশাসনের স্থায়ী নির্বাহ কর্তৃপক্ষ বলে অভিহিত করা হয়।
(ii) আইন-বিষয়ক : রাজ্যের আইন বিষয়ক দপ্তর রাজ্যপাল এবং রাজা আইনসভার দুটি কক্ষ বিধানসভা ও বিধান পরিষদ নিয়ে গঠিত। (বর্তমানে অবশ্য ২৮ টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মাত্র ৫ টি রাজ্য যথাক্রমে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, জম্মু ও কাশ্মীরে বিধান পরিষদের অস্তিত্ব আছে।) রাজা আইনসভা রাজ্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে যেসকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে তার মধ্যে রয়েছে রাজ্যর আইন প্রণয়ন, রাজ্যের শাসনবিভাগ অর্থাৎ রাজ্য মন্ত্রীমণ্ডলীকে নিয়ন্ত্রণ, রাজ্যের আর্থিক ব্যয়বরাদ্দের (বাজেটের) অনুমােদন ইত্যাদি।
(iii) সচিবালয় : রাজ্য প্রশাসনিক কাঠামাের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হল সচিবালয়। বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিবদের নিয়ে গঠিত একটি যৌথ সত্তা হল সচিবালয়। রাজ্য প্রশাসন তথা রাজ্য সরকার কর্তৃক গৃহীত যাবতীয় প্রশাসনিক নীতি, কর্মসুচি, আদেশ বা নির্দেশের বাস্তব রূপ দিয়ে থাকে সচিবালয়। সমগ্র রাজ্য প্রশাসনে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় এবং তাদের অধীনে কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলির রাজনৈতিক প্রধান হলেন রাজ্যের মন্ত্রীগণ, কিন্তু প্রশাসনিক প্রধান হলেন রাজ্য সরকারের নিযুক্ত সচিবগণ। মন্ত্রণালয়গুলির নীতি নির্ধারণে ও প্রশাসন পরিচালনায় মন্ত্রীগণকে সাহায্য করেন সচিবরা।
জন প্রশাসনের আধুনিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামােয় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, রাজ্য মন্ত্ৰীমণ্ডলী বস্তুত রাজ্য প্রশাসনের অস্থায়ী রাজনৈতিক প্রশাসক মাত্র। রাজ্য প্রশাসনের যাবতীয় নীতি ও কর্মসূচির বাস্তব রূপায়ণ এবং রাজ্যের সমগ্র প্রশাসন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রাজ্য মন্ত্ৰীমন্ডলী একা পালন করতে পারে না। এজন্য তাঁদের রাজ্য রাষ্ট্রকৃত্যকের আমলা ও রাজ্য প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাজ্য প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত এই সরকারি কর্মীদের অরাজনৈতিক স্থায়ী প্রশাসক বা প্রশাসনের স্থায়ী নির্বাহী কর্তৃপক্ষ বলে অভিহিত করা হয়। রাজ্য প্রশাসনের কাজে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত এই কর্মীরা প্রশাসনের ধারাবাহিকতা ও নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রেখে বিশেষ দক্ষতা ও কর্মকুশলতার সঙ্গে রাজ্যের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন।