দূর প্রাচ্যে ইঙ্গ জাপান চুক্তির প্রভাব কিরূপ হয়েছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে জাপানের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য রাজনৈতিক সাফল্য ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত ইঙ্গ জাপান চুক্তি। দূর প্রাচ্যের রাজনীতিতে ইঙ্গ জাপান চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম এবং এই চুক্তি জাপানের রাজনৈতিক উচ্চাশা চরিতার্থের ব্যাপারে খুব সহায়ক হয়ে ওঠে। সমতার ভিত্তিতে স্থাপিত এই চুক্তিতে স্থির হয়:-
(১) চীন ও কোরিয়ার ভৌগােলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষার মাধ্যমে ইংল্যান্ড এবং জাপান পরস্পরের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
(২) ইংল্যান্ড ও জাপান পরস্পরকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করতে প্রতিশ্রুত হয়। যদি এই অংশীদারের মধ্যে কোন একজন নিজ স্বার্থ রক্ষার জন্য কোন বিপক্ষ রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তাহলে অপর অংশীদার সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু যদি অপর কোন রাষ্ট্র বিপক্ষ রাষ্ট্রটিকে সাহায্যদানে অগ্রসর হয়, তাহলে অপর রাষ্ট্রটি মিত্র রাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে।
(২) শান্তির সময় ইংল্যান্ড ও জাপান পরস্পরের নৌবাহিনীকে পরস্পরের ব্যবহার করতে দিতে সম্মত হয়। এই চুক্তি পাঁচবছরের জন্য সম্পাদিত হয় কিন্তু স্থির হয় যে, প্রয়ােজন অনুসারে এই চুক্তির মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
দূর প্রাচ্যের তথা বিশ্বের ইতিহাসে এই চুক্তির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এই চুক্তির ফলেই জাপানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং জাপান আধুনিক বিশ্বের অন্যতম প্রথম শ্রেণীর শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ইংল্যান্ডের মতাে ইয়ােরােপীয় একটি বৃহৎ শক্তির সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করার পরই জাপান রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হতে সাহসী হয়ে ওঠে। বিশেষত ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তির ভয়ে ইয়ােরােপের কোন শক্তি রাশিয়াকে সাহায্য করতে অগ্রসর হবে না একথা সুনিশ্চিতভাবে জানার পরই জাপান রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করতে প্রস্তুত হতে থাকে। কোরিয়ার ব্যাপার নিয়ে জাপান ও চীনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই ফেব্রুয়ারী জাপান রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত হয়। স্থল ও নৌ উভয় ক্ষেত্রের যুদ্ধই জাপান প্রশংসনীয় দক্ষতার পরিচয় দেয়। শেষ পর্যন্ত সুসিমা প্রণালীর নৌযুদ্ধে রাশিয়ার বাল্টিক নৌবহর জাপানের কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হলে রুশ জাপান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
রুশ জাপান যুদ্ধের পর জাপান দূর প্রাচ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিরূপে গণ্য হয়। রাশিয়ার ন্যায় বৃহৎশক্তিকে পরাজিত করার পর দূর প্রাচ্য তথা বিশ্বেরও রাজনীতিতে জাপানের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পাশ্চাত্যের শক্তি সমূহ জাপানের ওপর জোর করে যে সব অসমচুক্তি চাপিয়ে দিয়েছিল সেগুলাে বাতিল করতে বাধ্য হয়। ফলে তার অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা জোরদার হয়ে ওঠে। অপরদিকে জাতীয় মর্যাদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাপানের সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সা প্রবল হয়ে ওঠে। রুশ জাপান যুদ্ধ পরিসমাপ্তির পর ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত পাের্টসমাউথ চুক্তির পাঁচ বছরের মধ্যে জাপান কোরিয়া অধিকার করে তার সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রথম পরিচয় দেয়। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই জাপানে সাম্রাজ্যবাদের প্রসার বৃদ্ধি পেতে থাকে।