তুঙ চি পুনরুদ্ধারের কর্মসূচী কি ছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
মাঞ্চু সম্রাট তুঙ চি (Tung Chih) -র রাজত্বকালে (১৮৬২-১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ) চীনের সম্রাটের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা তুঙ চি পুনরুদ্ধার নামে পরিচিত। পুনর্গঠনের এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন রাজকুমার কুঙ। সম্রাট হওয়ার পর তিনিই তুঙ চি নামে পরিচিত হন। পুনরুদ্ধারের প্রধান লক্ষ্য ছিল কনফুসিয়াসের পদ্ধতি এবং পশ্চিমী ভাবধারার প্রভাব মুক্ত সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি করে জাতীয় সংহতি পুনরুদ্ধারের জন্য ন্যায় ও নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত শক্তিশালী সরকার গঠন করা। তাঁদের ধারণা ছিল যে জাতীয় ঐক্য স্থাপন করা সম্ভব হলেই চীনকে পুনরায় শক্তিশালী করে তােলা সম্ভব হবে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যের ওপর তারা গুরুত্ব দিলেও তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিলেন না এবং অভিজাতশ্রেণীর ক্ষমতা অব্যাহত রাখার দিকেও তাদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। সুতরাং আধুনিক সমাজ গঠনের পরিবর্তে ভূস্বামীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজ ব্যবস্থা ও শাসননীতি গঠনের জন্য তারা চেষ্টা করেন। তুঙ চির শাসনকালে চীনের বিনষ্টপ্রায় আদর্শের পুনরুদ্ধার এবং দুর্বলতার স্থলে শক্তি সঞ্চয় — এই দুই প্রচেষ্টাই এই আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, বিশেষত তুঙ চি -কে প্রয়ােজনীয় কর্মসূচী নির্ধারণে উদ্বুদ্ধ করে। এই কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল চীনের অবলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যগত বা চিরাচরিত প্রথা সমূহের পুনঃপ্রবর্তন, কনফুসিয়াসের নীতিভিত্তিক শাসনব্যবস্থার পুনঃপ্রচলন, বৈদেশিক শক্তিবর্গের সঙ্গে শান্তিস্থাপন, পাশ্চাত্য ধাঁচে সৈন্যবাহিনী গঠন এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক নিয়মাদি অনুসরণ। পুনরুদ্ধারের কর্মসূচীর মধ্যেই এই আন্দোলনের প্রকৃতরূপ প্রকাশ পায়।
সনাতন দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেতৃবর্গের কর্মসূচীও রক্ষণশীলতার আদর্শে তৈরি হয়। প্রধানত শেঙ কুয়ােফান, লি হুঙ-চাঙ এবং শাে সুঙ-তাঙ — এই তিনজন পুনরুদ্ধারের কর্মসূচী গ্রহণ করেন। দুটি নীতি এই আন্দোলনে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বলাভ করে। (ক) সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসাবে কৃষিকার্য এবং (খ) সযত্নে নির্বাচিত উচ্চশ্রেণীর প্রতিভাবানদের দ্বারা পরিচালিত সরকারই সর্বশ্রেষ্ঠ। শাসনকার্যে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ােগের জন্য নিয়মিত পরীক্ষার পদ্ধতি পুনরায় প্রবর্তিত হয়। সামরিক বিভাগের পুনর্গঠনের দিকে মনােযােগ দেওয়া হয়। চীনের প্রাচীন সামরিক পদ্ধতির সঙ্গে ইয়ােরােপীয় আধুনিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে সৈন্যদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থার প্রচলন হয়। সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন সাধন করা হয়। পুরাতন বিদ্যালয়গুলাের সংস্কারসাধন করা হয় এবং নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পাঠ্য বিষয় নির্বাচন সম্পর্কেও পুনরুদ্ধারের আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা চলে। চীনের প্রাচীন সাহিত্যের সঙ্গে আধুনিক যুগােপযােগী জ্ঞান বিজ্ঞানের যােগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। ভূস্বামী ও অভিজাতদের পুনরায় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের দায়িত্ব নিতে বলা হয়। ব্যক্তিগত, আঞ্চলিক এবং সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। কৃষির উন্নতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার কথা বলা হয়। নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের কথাও বলা হয়। সংক্ষেপে বলা যায় তুঙ চি সংস্কারকগণ জাতীয় শিক্ষা ও জাতীয় অর্থনীতি পুনর্গঠনের মাধ্যমে চীনের জনসাধারণের আত্মশক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেন।