তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারন কি?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Sahamina
১৮৫১ থেকে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাইপিং বিদ্রোহ চীনদেশের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং চীনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তােলে। ধর্মীয় আন্দোলন হিসাবে প্রথমে এই বিপ্লবের সূচনা হলেও অল্পদিনের মধ্যেই এই আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ গ্রহণ করে। এই আন্দোলনের নেতা হুঙ সিউ-চুয়ান প্রায় দশ বছর নানকিং অঞ্চলের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করে সেখানে রাজত্ব করেন। তাইপিং বিদ্রোহের প্রথম পর্বের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ বিদেশী বণিকদের পরােক্ষ সাহায্য। বিদেশী বণিক ও ধর্মপ্রচারকগণ হুঙ সিউ-চুয়ান -এর প্রচারিত ধর্মমতের খ্রিস্টধর্মের কয়েকটি নীতির প্রাধান্য দেখে খুব আশান্বিত হয় এবং তাদের স্বার্থ ও কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির সুযােগের সম্ভাবনা দেখতে শুরু করে। বিদেশী শক্তিবর্গের মধ্যে ইংল্যান্ড, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স তাইপিং বিদ্রোহের প্রথম দিকে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে। কিন্তু বিদ্রোহের ব্যাপকতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাঞ্চু সরকার বিপদাপন্ন হয়ে পড়লে তারা তাদের নীতি বর্জন করে। ১৮৪২ থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তির দ্বারা যে সব সুযােগ সুবিধা লাভ করেছে তা রক্ষা করার জন্যই বিদেশী জাতিবর্গ দুর্বল মাঞ্চু সরকারের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। বিদ্রোহীদের নৃশংস বর্বর আচরণের ফলে এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য মাঞ্চু সরকারকে সাহায্য করার তারা একটি সুযােগ পেয়ে যায়। সাংহাই শহরে বিদ্রোহীদের দমন করার উদ্দেশ্যে একটি সামরিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়। মাঞ্চু সম্রাটের সৈন্যবাহিনী সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। বিদেশীদের সক্রিয় সহযােগিতা এবং চীনের সরকারই সৈন্যবাহিনীর চেষ্টায় বিদ্রোহ দমিত হয় এবং উপদ্রুত অঞ্চলে পুনরায় শান্তি স্থাপিত হয়। বিদ্রোহ প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে হুঙ সিউ-চুয়ান আত্মহত্যা করেন।
তবে মাঞ্চু সরকারের প্রতি বিদেশীদের সাহায্য প্রদানই তাইপিং বিদ্রোহ দমিত হওয়ার একমাত্র কারণ নয়। উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সামরিক দুর্বলতা তাইপিং বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার কারণ রূপে পরিগণিত হয়। বিদ্রোহীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার আর একটি প্রধান কারণ। বিদ্রোহী নেতৃবর্গের পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য সিদ্ধির পথে নানারূপ বাধার সৃষ্টি করে। অপর দিকে মাঞ্চু সরকার সেঙ কুয়েফান -এর মতাে দক্ষ সেনাপতির পূর্ণ সহযােগিতা লাভ করে। তাছাড়া দুটি বিশেষ কারণে তাইপিং বিদ্রোহ জনসাধারণের সমর্থন থেকে বঞ্চিত হয়। হুঙ সিউ-চুয়ান -এর প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থা চীনের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। মাঞ্চু সরকারের দুর্নীতি ও অপদার্থতা এই বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ হলেও নতুন সরকার এই দুটি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে সমর্থ হয়নি। শাসনতান্ত্রিক সংস্কার প্রবর্তনের এবং জনসাধারণের দুর্দশা দূরীকরণের উপায় উদ্ভাবন করতেও এই সরকার কোন প্রকার চেষ্টা করেনি। সর্বশেষে বলা যায় যে বিদ্রোহের নেতৃবর্গ চীনের জাতীয়তাবাদী মনােভাব এবং চীনের চিরাচরিত ঐতিহ্যকে সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করার চেষ্টা করেন। বিদ্রোহীদের এই মারাত্মক ভুলের সুযােগ মাঞ্চু সরকার পুরােপুরিভাবে সদ্ব্যবহার করে চীনের জাতীয়তাবাদী জনসাধারণের সমর্থন লাভ করতে সমর্থ হয়। বিদ্রোহীদের প্রতি জনসাধারণের সমর্থন হ্রাস পেতে শুরু করলে মাঞ্চু সরকারের পক্ষে তাইপিং বিদ্রোহ দমন করা সহজতর হয়ে ওঠে।