জাপানে মেইজি পুনরুদ্ধারের যুগে শিক্ষা সংস্কার সম্বন্ধে কি জান?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
শিক্ষার ব্যাপারে মেইজি পুনরুদ্ধারের যুগে জাপানের জাতীয় জীবনে এক নতুন মনােভাব সর্বাপেক্ষা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে জাপান বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে এবং সরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে অনেক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারিগরী বিদ্যালয়ও স্থাপিত হতে শুরু করে। প্রয়ােজন অনুসারে বিদেশী শিক্ষকদের এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত করা হয়। ইংরেজী ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। এবং ইংরেজী ভাষাকে জাতীয় ভাষা রূপে গ্রহণ করার জন্যও প্রস্তাব করা হয়। নতুন এই শিক্ষাব্যবস্থায় বৈদেশিক প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। আমেরিকার শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ ও প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন সাধন করে জাপানের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা গঠন করা হয়। ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয় এবং জার্মানীর বৃত্তিমূলক শিক্ষাপদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
নতুন শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী ছেলে-মেয়ে, উভয়েই দু’বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হতে এবং প্রথমদিকে চার বছর এবং পরে ছ’বছর সকলে স্কুলে পড়াশুনা করতে বাধ্য ছিল। স্কুলে তারা প্রাথমিক পাঠ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত চরিত্র গঠন করার এবং আধুনিক মনােভাবসম্পন্ন হয়ে ওঠার জন্য বিশেষভাবে তালিম গ্রহণ করার সুযােগ পেত। সম্রাটের প্রতি আনুগত্য এবং রাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা পােষণ করার মনােভাব গড়ে তােলার দিকে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি দান করে। পরবর্তীকালে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর চার বছরের দুটি পর্বে বিভক্ত করে আট বছরে পরিণত করা হয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার জন্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করবে না, তাদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরেই বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য বহুসংখ্যক শিক্ষকের প্রয়ােজন দেখা দেয় এবং সেজন্য শিক্ষক-শিক্ষণেরও সুবন্দোবস্ত করা হয়। পরবর্তীকালে বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রদানের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ছেলেদের শিক্ষাব্যবস্থার বিশেষ কোন পার্থক্য ছিল না। তবে গার্হস্থ্য জীবন সম্পর্কে তাদের বিশেষভাবে গড়ে তােলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করা হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার লাভ না করলেও, মেয়েদের স্কুল-কলেজে প্রবেশ লাভের সুযােগ পরিবর্তিত চিন্তাধারার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। নতুন যুগের প্রারম্ভে সরকারী উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন জাপানের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পাশ্চাত্যের অনুকরণে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব আরােপের ফলে পাশ্চাত্যের রীতি-নীতি ধ্যান-ধারণা জাপানের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে এবং জাপানে অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়। কিন্তু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবধারার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান না করে পাশ্চাত্য রীতি-নীতি অন্ধভাবে অনুকরণের ফলে পরে নানাপ্রকার অসুবিধা দেখা দেয়। তবে এই শিক্ষা ব্যবস্থার নানা ত্রুটি থাকলেও নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের ফলে জাপানের উন্নতি ও আধুনিকীকরণের পথ উন্মুক্ত হয়।