চেন তুসিউ এর রাজনৈতিক চিন্তাধারা সম্বন্ধে কি জান?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Sahamina
1925-1926 খ্রিস্টাব্দের চীনের বিপ্লবের সময় অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে বুর্জোয়াদের পরিচালিত আন্দোলন স্বাভাবিক দুর্বলতা ও সংশয় অতিক্রম করতে ব্যর্থ ছিল। অপরদিকে জনগণের আন্দোলন ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং সংহতি লাভ করতে সমর্থ হয়। সুতরাং চীনের সাম্যবাদী দল এই সুযােগে নিজেদের ক্ষমতা অপ্রতিহত করে তােলার সুযােগ পেতে পারত। তবে তখনও চীনের সাম্যবাদী দল তাদের প্রাথমিক দুর্বলতা দূর করতে পারেনি এবং বাস্তব রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও তাদের খুব সামান্য ছিল। কিন্তু সর্বোপরি সাম্যবাদী দলের নেতা চেন তুসিউ (Chen Tu-Hseu) দুর্বল এবং আপস মীমাংসার নীতি সাম্যবাদী দলের প্রভাব বিস্তারের পথে প্রধান বাধার সৃষ্টি করে। তবে একথা ঠিক যে, কুওমিনতাঙ দলের সঙ্গে আপস মীমাংসা করে সামন্ততান্ত্রিক এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে জনশক্তিকে সুনির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করে শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক বিপ্লবকে জয়ী করে তােলার সুযােগ চেন তুসিউ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করে সামরিক শক্তির ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের শক্তি বা সামর্থ্য চেন তু সিউর ছিল। বরং তিনি কুওমিনতাঙ দলের বিত্তশালী ও সামন্তশ্রেণীর আশঙ্কা দূর করার জন্য বিপ্লবী সৈন্যদের দ্বারা অধিকৃত অঞ্চলে শ্লোগান দেওয়া নিষিদ্ধ করে দেন। এমনকি তিনি মাও দে-জঙ এবং অন্যান্য নেতৃবর্গের নির্দেশ অমান্য করে কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে সংহতি গড়ে তােলার পদ্ধতির মধ্যেও বাধার সৃষ্টি করেন।
কিন্তু এই সময় চীনের কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্ব ছিল চেন তুমিউ এবং অন্যান্য দক্ষিণপন্থী সাম্যবাদী নেতাদের ওপর। যদিও চিয়া কাই-সেকের ক্ষমতালাভের কিছুদিন পরেই কমিউনিস্ট দলের পঞ্চম কংগ্রেস অধিবেশনে দক্ষিণপন্থী নেতৃবর্গের সুবিধাবাদী নীতির তীব্র সমালােচনা করা হয়, তথাপি দলের নেতৃত্বের কোন পরিবর্তন হয়নি। হুনান প্রদেশের কৃষক আন্দোলন সফলতা অর্জন করার অব্যবহিত পরেই মাও দে-জঙ্গ এই কংগ্রেস অধিবেশনে যােগ দেন এবং দলের নীতির সমালােচনা করেন। কিন্তু তাকে এই কংগ্রেসে ভােটদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। ফলে তার সমালােচনা পার্টির নীতি নির্ধারণে কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। প্রকৃতপক্ষে চেন তু-সিউ বিত্তশালী সামন্তদের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে তার উদ্দেশ্য সফল করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তার এই নীতি বাস্তব অবস্থার সম্পূর্ণ বিরােধী ছিল। তার অন্যতম সহকর্মী এবং দক্ষিণপন্থী কমিউনিস্ট দলের অন্যতম নেতা তান পিঙ-সানও সংগ্রামশীল কৃষক সংগঠন গড়ে তােলার বিপক্ষে ছিলেন।
ইতিমধ্যে 1927 খ্রিস্টাব্দের ১ লা অগাস্ট চৌ এন-লাই, ইয়েতিং, হাে লুঙ প্রমুখ নেতৃবর্গ নাংচাঙ ও কিয়াংসি প্রদেশের প্রতি বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ত্রিশ হাজার বিপ্লবী সৈন্যসহ সংগ্রামে লিপ্ত হন। এই সৈন্যবাহিনীই চীনের বিখ্যাত লাল ফৌজের গােড়াপত্তন করে। 1927 খ্রিস্টাব্দের ৭ ই অগাস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ অধিবেশনে চেন তু-সিউকে নেতৃত্ব থেকে অপসারিত করা হয়। চেন তু-সিউ এবং অন্যান্য দক্ষিণপন্থী নেতৃবৃন্দের অপসারণের ফলে পার্টির নেতৃত্ব বামপন্থী নেতাদের হস্তগত হয়। সাম্যবাদে বিশ্বাসী হলেও চেন তু-সিউ সুবিধাবাদী ও আপস মীমাংসার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কুওমিনতাদের সাফল্যের ফসল সংগ্রহ করে তিনি চীনে সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা ও শাসনতন্ত্র গড়ে তােলার স্বপ্ন দেখতেন। তার এই অবাস্তব চিন্তাধারার জন্যই তার পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে।