চীনের ৪ঠা মে আন্দোলনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য কি?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Habiba
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা মের আন্দোলনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রকৃতি এবং তাৎপর্য বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। রাজনৈতিক দিক থেকে আন্দোলনকারীরা স্লোগান তােলে— “দেশ বাঁচাও”। আন্দোলনকারীদের এই স্লোগান ছিল চীনের তৎকালীন হীন অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। চীনের অভ্যন্তরে বিদেশী শক্তিবর্গের উগ্র সাম্রাজ্যবাদিতার প্রকোপ, অসম শর্তের ভিত্তিতে স্বাক্ষরিত সন্ধিসমূহের কার্যকারিতা, বিদেশীদের প্রতি রক্ষণশীলদের সমর্থন প্রভৃতি নির্মূল করার উপযােগী কার্যক্রম অনুসরণ করার জন্য বিপ্লবীরা কৃতসঙ্কল্প হয়। জাতীয় দাবি পূরণের জন্য প্রয়ােজন অনুসারে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া এবং চিরাচরিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ — এই দুটি বিপ্লবীদের কর্মসূচীতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করে। চীনকে বিদেশীদের হাতের পুতুলে পরিণত করার বিরুদ্ধে এবং চীন সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা বিনষ্ট করার অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে চীনের ছাত্রসমাজ, শ্রমিক ও বুদ্ধিজীবীদের স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলন চীনের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযােগ্য সংযােজন।
অর্থনৈতিক দিক থেকে চীনকে আত্মনির্ভরশীল করে তােলার দিকেও ৪ ঠা মের আন্দোলনের নেতাদের সতর্ক দৃষ্টি ছিল। বিদেশী পণ্য বর্জন আন্দোলনের কর্মসূচী গ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চীনের নিজস্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলােকে শক্তিশালী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করা। বিশেষত জাপানী পণ্যদ্রব্যের ব্যাপক ও অবাধ আমদানির ফলে চীনের অর্থনৈতিক জগতে এক বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হয়। ৪ ঠা মের আন্দোলনের নেতৃবর্গ সেজন্য সর্বপ্রথম জাপানী পণ্যদ্রব্য বয়কট করার জন্য জনমত গঠন করতে চেষ্টা করে। এই কারণেই চীনের বণিকগণ ৪ ঠা মের আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে অগ্রসর হয়। বিদেশী পণ্যদ্রব্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চীনের নিজস্ব পণ্যদ্রব্য নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের প্রচেষ্টায় চীনের জনসাধারণ পুনরায় স্বদেশী পণ্যদ্রব্য ক্রয় করতে শুরু করলে চীনের অর্থনৈতিক জগতে এক বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপিত হয় এবং এই সব কারখানার উৎপন্ন দ্রব্যই চীনের অধিবাসীদের আত্মশক্তির পুনরুত্থানের পথ প্রশস্ত করে। অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কর্মসূচীতে কলকারখানা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান পাওয়ায় চীনের শ্রমিকশ্রেণী এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে চীনের কৃষকশ্রেণী এই আন্দোলনে যােগদান করা থেকে বিরত থাকে।
৪ ঠা মের আন্দোলন চীনকে সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কটমুক্ত না করলেও দেশবাসীকে চীনের সঙ্কট সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে সমর্থ হয়। আবার একই সঙ্গে দেশ সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়। তাছাড়া এই আন্দোলনের ফলে পাশ্চাত্যের জ্ঞান বিজ্ঞান ও চিন্তাধারা চীনে জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ থেকে চীনে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করার যে আন্দোলন শুরু হয়, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা মে -র আন্দোলন ছিল তারই একটি উল্লেখযােগ্য অধ্যায়। এই আন্দোলন দেশকে প্রাচীন ঐতিহ্যগত চিন্তাধারা, নীতিবােধ ও মূল্যবােধ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। ৪ ঠা মে -র আন্দোলনের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে তার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য।