চীনের বাণিজ্য পদ্ধতিতে আফিম কিরূপ গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ করেছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
প্রথম দিকে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য একপাক্ষিক ছিল বলে পণ্যদ্রব্যের বিনিময়ে চীন রৌপ্য পিণ্ড আমদানি করত। কিন্তু পরবর্তীকালে পণ্যদ্রব্য বিনিময় প্রথা শুরু হয়। চা, রেশম ও অন্যান্য বস্ত্রের বিনিময়ে চীনদেশ বিদেশীদের কাছ থেকে মশলা, চন্দনকাঠ, নানারূপ বস্ত্র, চাল প্রভৃতি আমদানি করত। কিন্তু আফিমের আমদানি বৃদ্ধি হওয়ার ফলে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বিনষ্ট হয় এবং উনবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে আফিমই চীনের প্রধান আমদানি পণ্যে পরিণত হয়। ভারত, পারস্য ও তুরস্ক থেকে চীনে আফিম আমদানি করা হত। তবে আফিমের ব্যবসায়ে সকল বিদেশীজাতি অংশগ্রহণ করত না। প্রধানত ইংল্যান্ড ছিল এই ব্যবসায়ের পুরােভাগে এবং তারপরেই ছিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্থান। অপরদিকে আফিমের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চীনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তনের সূচনা হয়। আফিম ব্যবহারের প্রচলন সমাজজীবনের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। আমদানিকৃত আফিমের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং চীনের অর্থনীতির ওপর তার প্রভাব পড়ে। আফিমের ব্যবসা বৃদ্ধির প্রথম পর্বে চীন সরকার সামাজিক ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক এই প্রথা দূর করার চেষ্টা করে। অর্থনৈতিক নতুন বিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করেও আফিম আমদানি সুসংহত করার চেষ্টা করে। বিশেষত দেশ থেকে রৌপ্যপিণ্ড বাইরে রপ্তানি বন্ধ করার জন্যই চীন সরকার বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে চীনের সম্রাট চিয়াং চিং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির কথা চিন্তা করে চীনে আফিম আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু আফিম ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত দেশী ও বিদেশী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং চীনা রাজকর্মচারীগণ গােপনে আফিমের চোরাকারবারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং রাজকীয় নিষেধাজ্ঞা অর্থহীন হয়ে পড়ে।
ইতিমধ্যে আমদানিকৃত আফিমের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে চীনের আমদানিকৃত আফিমের মােট পরিমাণ ছিল ১৪০ থেকে ১৬০ পাউন্ডের দু-হাজার পেটি। ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে তার পরিমাণ দাঁড়ায় চল্লিশ হাজার পেটি। ফলে চীন থেকে রৌপ্যপিণ্ড দ্রুত বিদেশে রপ্তানি হতে শুরু করে। ১৮৩০-১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২০ লক্ষ আউন্স রূপা বিদেশে রপ্তানি হয়। দেশের অভ্যন্তরেও রূপার দাম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে খাদ্যশস্যের দাম হ্রাস পায় এবং কৃষকদের অবস্থা শােচনীয় হয়ে পড়ে। কারণ ভূস্বামী এবং কর আদায়কারীগণ নিজেদের আয় বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কর আদায় করতে চেষ্টা করে। ফলে চীনের কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই বৃদ্ধি পায় এবং ১৮১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে চীনে কৃষক বিদ্রোহ প্রায় একটি স্থায়ী বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। এইরূপ পরিস্থিতিতে মাঞ্চু সম্রাটদের পক্ষে আফিমের ব্যবসায়ের ওপর একটি কঠোর বাধানিষেধ আরােপ করা প্রয়ােজন হয়ে পড়ে। সরকারী এই কঠোর নীতি কার্যকরী করার জন্য সুদক্ষ ও দেশপ্রেমিক রাজকর্মচারী লিন-সে-ফু কে ক্যান্টনের বিশেষ কমিশনার নিযুক্ত করা হয়। জনসাধারণের সমর্থনে লিন ক্যান্টন বন্দরে ইংরেজ ও আমেরিকান অধ্যুষিত অঞ্চল অবরােধ করেন। ফলে আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে তারা দু-হাজার পেটি আফিম চীনের হস্তে অর্পণ করে। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ রা জুন লিন জনসাধারণের সম্মুখে আফিমের পেটির নষ্ট করেন। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্টনের বাণিজ্য ধ্বংস হয় এবং প্রথম আফিমের যুদ্ধ শুরু হয়।