চীনের নজরানা পদ্ধতি বাণিজ্য কি ছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বণিকগণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চীনদেশে এসে উপস্থিত হত। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রতি চীনের সাধারণ লােকদের বা সরকারের কোন প্রকার আগ্রহ ছিল না। তথাপি বিদেশীদের আগ্রহাতিশয্যে তারা সীমিত বাণিজ্যিক অধিকার দান করে এবং তাদের ক্যান্টন বন্দরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করার অনুমতি দেয়। কিন্তু স্থায়িভাবে বিদেশীদের ক্যান্টনে বসবাস করার, পারস্পরিক প্রয়ােজন ও সমতার ভিত্তিতে বাণিজ্যসম্পর্ক স্থাপন করার অধিকার থেকে চীন সরকার তাদের বঞ্চিত করে। চীনের সম্রাটদের ধারণা ছিল যে, নিজেদের এবং দেশের স্বার্থে বিদেশী বণিকগণ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে উৎসাহী, সুতরাং নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্কের পরিবর্তে বিদেশীদের প্রদত্ত অর্থ ও নানাপ্রকার উপঢৌকনকে তারা নজরানা বা কর রূপে বিবেচনা করত। নিজেদের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্পর্কে ভিত্তিহীন উচ্চধারণাই ছিল এইরূপ মনােভাব গড়ে ওঠার মূল কারণ। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, নরওয়ে, বেলজিয়াম, স্পেন প্রভৃতি দেশের শাসকবর্গের প্রেরিত উপহার ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী অনিচ্ছা সত্ত্বেও গ্রহণ করে চীনের শাসকশ্রেণী বিদেশী বণিকদের বাণিজ্যের অধিকার দিতেন। বিভিন্ন দেশের নরপতিদের দ্বারা প্রেরিত উপঢৌকনকে চীনের সম্রাট ও সরকারী কর্মচারী কর হিসাবেই গণ্য করত।
তথাকথিত কর প্রথার ওপর প্রতিষ্ঠিত চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছিল। একপাক্ষিকত্ব ছিল এই বাণিজ্যের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য। ইউরোপে চীনের উৎপাদিত পণ্য দ্রব্যের চাহিদাপূরণের জন্য বিদেশী বণিকগণ চীনদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করতে উদগ্রীব ছিল, কিন্তু চীনে ইউরোপীয় পণ্য দ্রব্যের বিশেষ কোন চাহিদা ছিল না। দ্বিতীয়ত, সাধারণ বণিকদের পরিবর্তে কো-হং নামে পরিচিত বণিক সংস্থার মাধ্যমে এই বাণিজ্য পরিচালিত হত। তৃতীয়ত, বিদেশী বণিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও উপঢৌকন মাঞ্চু সরকারের কাছে দেয় কর হিসাবে গণ্য হলেও তার সিংহভাগই বাণিজ্যবন্দরের বিভিন্ন রাজ কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হত। রাজকোষাগারে খুব সামান্যই জমা পড়ত। যা হােক পরবর্তী কালে উন্নততর সামরিক শক্তির অধিকারী পাশ্চাত্য জাতিসমূহ অসম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত কর প্রথার মাধ্যমে বাণিজ্য পরিচালনার পরিবর্তে বলপূর্বক বাণিজ্যিক অধিকার স্থাপনের জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। আফিমের যুদ্ধের সাফল্যই তাদের এই সুযােগ এনে দেয়।