চীনের গণ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য কি?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত On New Democracy পুস্তকে মাও জে দঙ চীনের গণ বিপ্লবের প্রকৃতি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন যে চীনের বিপ্লবের ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য দুটি পর্বে বিভক্ত — গণতন্ত্রের পর্ব ও সমাজতন্ত্রের পর্ব। চীনের তৎকালীন ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক ও আধা-সামতান্ত্রিক সমাজকে গণতান্ত্রিক সমাজে পরিণত করা ছিল গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রথম পর্বের কাজ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য যে, প্রথম পর্বে শ্রমিক, কৃষক ও জাতীয় বুর্জোয়াদের সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রগঠন করে জমিদার ও আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়াদের দমন করে — অবশ্য এই পর্বের নেতৃত্বও শ্রমিকশ্রেণী ও কমিউনিস্টদের হাতে ন্যস্ত থাকে। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে নয়া গণতন্ত্র প্রবর্তিত থাকে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক নায়কতন্ত্রের দ্বারা তা পরিচালিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ছিল বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করে সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা করা। চীনের জনসাধারণতন্ত্র হল সর্বহারা শ্রেণীর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বাধীনে এবং শ্রমিকশ্রেণী ও কৃষকশ্রেণীর সহযােগিতায় কার্যকরী করা হয়। ফলে চীনের নয়া গণতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
চীনের বিপ্লবের আর একটি বৈশিষ্ট্য গণবিপ্লব ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সংমিশ্রণ। চীনে গণবিপ্লবের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী, আধা-সামন্ততান্ত্রিক ও আধা-ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে সমর্থ হয়। চীনের এই নতুন সংস্কৃতি হল নতুন রাজনীতি ও নতুন অর্থনীতির আদর্শগত প্রতিফলন। চীনের নতুন সাংস্কৃতিক শক্তি সম্ভাব্য অনুকুল শক্তির সহযােগিতা লাভ করে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্রাজ্যবাদী ও সামন্তবাদী শক্তির ওপর আক্রমণ চালায়। দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্প প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই এই শক্তি প্রভূত অগ্রগতি সাধন করতে সমর্থ হয়। এই নতুন শক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গীর প্রভাবে চীনের ভাবধারা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়।
চীনের বিপ্লবের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অবতরণ এবং এই বিপ্লবকে কেন্দ্র করেই দেশের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের পরিচালক শক্তি হিসাবে সর্বহারা শ্রেণীর প্রবেশ ঘটে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা মের আন্দোলনের পর চীনের জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণী অব্যাহতভাবে বিপ্লবে যােগ দিলেও পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে এই প্রথম রাজনৈতিক বুদমঞ্চে অবতীর্ণ হয়ে সর্বহারা শ্রেণী অতি দ্রুত একটি স্বাধীন ও সচেতন শ্রেণীতে পরিণত হয়। বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে সর্বহারা শ্রেণী জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর বিপ্লবী চরিত্রকে অবহেলা না করে, তারই সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। কিন্তু সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, জাপানী সাম্রাজ্যবাদকে বিতাড়িত করতে এবং জনগণকে প্রয়ােজনীয় নেতৃত্ব প্রদান করতে জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণী অসমর্থ। সুতরাং রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব চীনের কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও পাতি বুর্জোয়াদের গ্রহণ করতে হয়। চীনের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় ও সরকারী কাঠামাের অনিবার্য মৌল অংশরূপে তাদের বিবেচনা করা হয়।