একশো দিনের সংস্কার লক্ষ্যপূরণে চীন ব্যর্থ হয়েছিল কেন?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Sahamina
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই জুন থেকে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের মধ্যে সম্রাট কোয়াংসি কাঙ-য়ু-উয়েই কর্তৃক সম্পাদিত অনেকগুলাে সংস্কারমূলক আইন প্রবর্তন করেন। সরকারীপদে নিযুক্তির জন্য কনফুসিয়াসের প্রাচীন পরীক্ষা পদ্ধতি তিনি বাতিল করেন এবং আধুনিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য তিনি নির্দেশ দেন। সম্রাটের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগ করার অধিকারসম্পন্ন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগ পরিচালনার জন্য তিনটি পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করেন। রেলপথ, শিল্প ও খনি উন্নয়নের জন্যও তিনি বিদ্যালয় স্থাপন করার ব্যবস্থা করেন এবং কৃষিকার্যের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য কৃষকদের নির্দেশ দেন। তাছাড়া বিচার বিভাগের সংস্কার, বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা প্রবর্তন, মাঞ্চু অভিজাতবর্গের লােভনীয় পারিশ্রমিকে নামেমাত্র পদাধিকার রহিত এবং সরকারী ব্যয়ে মাঞ্চু অভিজাতদের জমি চাষবাস করার জন্য সামরিক বাহিনীর লােকদের সরবরাহ করার নীতি বাতিল বলে ঘােষণা করেন।
সম্রাট কোয়াংসির পক্ষ থেকে এইসব সংস্কার প্রবর্তনের কথা প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল দল অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাচীনপন্থী সামন্তগণ এবং অভিজাতশ্রেণীর পক্ষ থেকে ঘােষণা করা হয় যে, স্বয়ং সম্রাটের নামে প্রচারিত হলেও একখণ্ড লিখিত কাগজ কখনও জোর করে কোন বৈপ্লবিক সংস্কার কার্যকরী করতে পারে না। সম্রাজ্ঞী য়ু-শি’র নেতৃত্বে সম্রাট কোয়াংসিকে রাজপ্রাসাদে অন্তরীণ করে রাখা হয় এবং ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু পর্যন্ত ভাগ্যহীন সম্রাট এইভাবেই জীবনযাপন করতে বাধ্য হন। সংস্কার কর্মসূচীর প্রধান কাও-য়ু-উয়েই এবং সংস্কারক দলের নেতাদের অনেকেই দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করার ব্যবস্থা করেন। যারা পালাতে অসমর্থ হন তাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।
নানারূপ সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও সংস্কারক দলের নেতৃবর্গ অনেকেই সাহসী, বুদ্ধিমান এবং সততার সঙ্গে মনে প্রাণে সংস্কার সাধনের পক্ষপাতী ছিলেন কিন্তু তাদের এই আন্দোলন চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এই ব্যর্থতার মূল কারণ হল চীনের জনসাধারণের প্রকৃত সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় উদ্ভাবন করার ব্যাপারে তাদের সীমাহীন অজ্ঞতা।
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দের সংস্কারগগাষ্ঠী মাঞ্চু রাজবংশের প্রকৃত চরিত্র নির্ণয় করতে এবং মাঞ্চু শাসন পদ্ধতির চিরাচরিত প্রথা উপলব্ধি করতে সমর্থ হননি। তারা কখনও উপলব্ধি করতে পারেননি যে, মাঞ্চু শাসন পদ্ধতিতে ক্ষমতা এককভাবে কোন ব্যক্তিই ভােগ করতেন না, এমন কি সম্রাটও স্বয়ং নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগােষ্ঠীই ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। রাজনৈতিকভাবে তারা ছিলেন ধনবান বুর্জোয়া গােষ্ঠীর মুখপাত্র। ব্যক্তিগতভাবে তারা ছিলেন সামন্ত অথবা উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের বংশােদ্ভূত। সুতরাং সামন্ত ও বুর্জোয়াশ্রেণীর রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশেষ সুযােগ সুবিধা ভােগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কোনই কর্মসূচী তাদের ছিল না। চীনের কৃষকদের জন্য তারা কোন সুযােগ দিতেই প্রস্তুত ছিলেন না — চীনের লােকসংখ্যার অধিকাংশই তখন কৃষক এবং তাদের সক্রিয় সাহায্য ব্যতীত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের পথের বাধাগুলাে দূর করা অসম্ভব ছিল।