উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জাপানে মন্দির বিদ্যালয়গুলাের ভূমিকা কি ছিল?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Sahamina
টকুগাওয়া সােগানদের শাসনকালে জাপানে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিশেষভাবে প্রসার লাভ করে। এই সময় সর্বশ্রেণীর জাপানীদের মধ্যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই জাপানে শিক্ষা ও সংস্কৃতির খুবই সমাদৃত হতে শুরু করে। সে যুগ ছিল আশিকাগা যুগ (১৩৩৩-১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ)। কয়েকটি বিশেষ কারণে জাপানে তখন সাংস্কৃতিক প্রসার ঘটে।
প্রথমত, সামরিক ও বেসামরিক শ্রেণীদ্বয়ের একান্ত প্রচেষ্টা জাপানে সংস্কৃতি প্রসারের পথ প্রশস্ত করে তােলে। সােগান, ডাইমাে ও সামুরাইগণ সম্মিলিতভাবে জাপানকে সুশিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান দেশে পরিণত করার জন্য সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হন। তবে সােগানের পক্ষ থেকে শিক্ষা ও সংস্কৃতি পৃষ্ঠপােষকতা করার একটি বিশেষ কারণ ছিল। সােগান মনে করতেন যে দেশের শক্তিশালী ব্যক্তিগণ শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হলে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে নির্বিবাদে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভােগ করা সহজতর হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে জাপানে সাহিত্য, ইতিহাস, শিল্প, সঙ্গীত প্রভৃতি বিষয়ে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয় এবং সাধারণ মানুষও এই সব গ্রন্থ সংগ্রহ করতে শুরু করে। জাপানে চীনের সভ্যতার অনুপ্রবেশ জাপানে শিক্ষা প্রসারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে বিদ্যালয় স্থাপিত হতে থাকে। বিশেষত এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে কিয়ােটোর সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত জেন (Zen) নামক মঠের সন্ন্যাসীগণের প্রভাবে শিক্ষা প্রসারের আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। জেন নামক মঠের সন্ন্যাসীদের অনুকরণে অন্যান্য মঠের সন্ন্যাসীগণও নিজ নিজ অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে অন্যান্য দেশের মতে জাপানের মঠের সন্ন্যাসীগণ সবচেয়ে শিক্ষিত সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিলেন। মঠের মাধ্যমে সন্ন্যাসীদের স্থাপিত ও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলাে ধীরে ধীরে সংস্কৃতির কেন্দ্ররূপে গড়ে উঠতে থাকে। সেজন্য এই সব স্কুল মঠ-বিদ্যালয় বা টেম্পল স্কুল (Temple School) নামে পরিচিত ছিল। সন্ন্যাসীগণ ছাত্রদের জন্য সাহিত্য, ভূগােল, ইতিহাস, গণিতশাস্ত্র, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে বহু পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে শুরু করেন। ডাইমাে, সামুরাইগণ নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য আগ্রহ হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন মঠেও সন্ন্যাসীদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। আশিকাগা যুগের পরবর্তী টকুগাওয়া যুগে শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে নাগাদ স্থাপিত হয় প্রথম বাকুফু কলেজ। শিক্ষার্থীদের জন্য কনফুসীয় শিক্ষাভিত্তিক বহু পুস্তক প্রণীত হয়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এমন কোন ডাইমাের জমিদারী ছিল না যেখানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই শিক্ষা প্রসার যে কেবল সম্রান্ত বংশীয়দের মধ্যে সীমিত ছিল, তা নয়। জনসাধারণও শিক্ষার সুযােগ লাভ করে। শিক্ষা প্রসারের এই আন্দোলনের ফলে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জাপানে পুরুষদের মধ্যে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ জন ছিলেন লিখন পঠন সক্ষম।