আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য কী?
Sign Up to our social questions and Answers Engine to ask questions, answer people's questions, and connect with other people.
Login to our social questions & Answers Engine to ask questions answer people's questions & connect with other people.
Mustafa
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি কথাটি অনেকে সমার্থক মনে করেন। কিন্তু পালমার এবং পারকিনস (Palmer and Parkins) – এ দুয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য স্বীকার করেন। এই পার্থক্য অনেকে অনুধাবন করতে না পারায় জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচনার ক্ষেত্রে শব্দগত বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সংকীর্ণ অর্থে আন্তর্জাতিক রাজনীতি হল আন্তর্জাতিক সমাজের রাজনীতি। কুটনীতি, বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক সংগঠনের সম্পর্কের বিশ্লেষণ নিয়েই আন্তর্জাতিক রাজনীতি আলােচনা করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অংশ বিশেষ বলা যায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনেক বেশী ব্যাপক এবং বর্তমান নতুন নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে এর পরিধি অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে।
সুতরাং অনেকে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির এলাকা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক বিষয় ছাড়াও অর্থনৈতিক, সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় আলােচনা করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি অনেক সময় ক্ষমতা বা শক্তি (power) নিয়ে বিশেষ আলােচনা করে। অনেকে মনে করেন যে রাজনীতি (politics) কথাটির বিরােধ সংঘাত, চাপ প্রভৃতির ধারণা জড়িত। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযােগিতা, পারস্পরিক আলােচনা ও সমন্বয়ের দিকটি প্রধান। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক (political) ও অরাজনৈতিক (non-political) উভয় বিষয় নিয়েই আলােচনা করে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সরকারী বেসরকারী সম্পর্ক নিয়ে আলােচনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রয়ােজনীয়তা : বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রত্যেক দেশেই সমাজ বিজ্ঞানের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসাবেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আলােচনা বিশেষ গুরুত্ব করেছে। আজকের পৃথিবী পরস্পর – নির্ভরশীল পৃথিবীতে পরিণত হয়েছে। কোনো দেশের সমস্যাকে আজকে শুধু নিজের দেশের সমস্যা বলে গণ্য করা যায় না। অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাস্কি (Harold Laski) বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ব ভিন্ন, জাতীয় বিচ্ছিন্নতা নয়, আন্তর্জাতিক নির্ভরতা, প্রতিযােগিতা নয়। সহযােগিতার প্রয়ােজনীয়তা বর্তমানকালে আমাদের মন অধিকার করে আছে। সুতরাং বর্তমান যুগে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও বিশ্ব রাজনীতির সমস্যাগুলি সকল ব্যক্তি ও জাতির নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী এবং একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ, শান্তি, নিরাপত্তা, মানব উন্নয়ন সম্পর্কিত সমস্যা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানের ছবিকে পরিচিত হতে হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান অর্জন এবং সঠিক ধারণা থাকা প্রয়ােজন। এখানেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পঠন – পাঠনের উপযােগিতা ও প্রয়ােজনীয়তা। বর্তমানে বিশ্বে এমন কোনাে রাষ্ট্র নেই, যে কোনাে না কোনােভাবে অন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল নয়। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধানের জন্যে প্রত্যেক রাষ্ট্রকে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আলােচনা, চুক্তিসম্পাদনা, পারস্পরিক শুভেচ্ছা সফর, সাংস্কৃতিক বিনিময় অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন, কুটনৈতিক আদান – প্রদান, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ কারণে প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রনীতি আজ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ধারণা করতে কোনাে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর প্রতিক্রিয়া বিবেচনার মধ্যে আনতে হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে আণবিক অস্ত্রের প্রসার, তার ধ্বংসাত্মক পরিণতি সভ্যতাকে এক অবর্ণনীয় সংকটে মুখােমুখী দাড় করিয়েছে। আন্তঃদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, নিউটন বােমা এবং অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন দেশ। শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যে সহ – অবস্থান আজ একান্ত জরুরী ; এর বিকল্প হল সর্বাত্মক ধ্বংস। কোনাে রাষ্ট্রের ভ্রান্ত পদক্ষেপ সারা বিশ্বে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। ক্ষমতার রাজনীতি এখনও নানাভাবে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা গ্রহণ করছে। আণবিক যুগে ক্ষমতার রাজনীতি একদিকে আধিপত্য ও ব্যাপক গণহত্যার কারণ হয়ে দাড়াবে। আজ তাই সারা পৃথিবীতে মানুষ যুদ্ধের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তির সপক্ষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তােলার চেষ্টায় অবিরাম লড়াই করে চলেছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, হিরােশিমা – নাগাসাকির দুঃস্বপ্ন মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে আগ্রহশীল করে তুলেছে। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংস থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (UNO) আজও বৃহৎ পঞ্চশক্তি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। উপরােক্ত আলােচনা ও সমস্যার গভীরতা বিচার করলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠের উপযােগিতা সম্পর্কে সন্দেহের কোনাে অবকাশ থাকে না।